প্রকৃতি, পরিবেশ ও প্রতিবাদ



আকাশ জুড়ে মেঘ করেছে, বৃষ্টি নেমে আসে,
বৃষ্টি থেমে যেতে দেখি রাস্তা জলে ভাসে।
পাশেই আছে নিকাশি নালা, জল যাবার তরে,
তাও কেন রাস্তায় জল জমল এমন করে?
হঠাৎ দেখি নিকাশি নালায় আবর্জনা জমে,
প্লাস্টিক বোতল প্যাকেটে জলের যাওয়া গিয়েছে থেমে।
আয়রে মোরা সবাই মিলে প্লাস্টিক বর্জন করি,
প্লাস্টিকমুক্ত সুন্দর পৃথিবী হাত মিলিয়ে গড়ি।

হঠাৎ সেদিন শুনতে পেলাম ২০৫০ সালে,
পৃথিবীটা সাগরজলের তলায় যাবে চলে।
এর জন্য দায়ী হল বিশ্ব-উষ্ণায়ন,
যাহার তরে গলেছে বরফ, জল বাড়ছে এখন।
মোদের বসুন্ধরা ডুবে যাবে তাহার তরে,
গাছ ও পশুপাখিদের সাথে মোরাও যাব মরে।
আয়রে মোরা সবাই মিলে করি বৃক্ষরোপণ,
নইলে কি করে রুখতে পারব বিশ্ব উষ্ণায়ন।

কারখানা ও মোটর থেকে বেরোয় কালো ধোঁয়া,
সেই ধোঁয়া-মেশা বাতাসে শ্বাস যায় না নেওয়া।
পৃথিবীতে ফুসফুসের রোগে ১০ সেকেন্ডে একজন,
মারা যে যায় তার জন্য দায়ী বায়ু-দূষণ।
বায়ু দূষণ কমাতে পারে গাছের ঘন বন,
তাই মোদের লাগাতে হবে প্রচুর গাছ এখন।
আয়রে মোরা হাত মিলিয়ে রুখি বৃক্ষছেদন,
নইলে মোরা কী করে বন্ধ করব বায়ু দূষণ।

ফ্রিজ, এসি ও সুগন্ধি দ্রব্য ব্যবহারের তরে,
ক্লোরোফ্লুরোকার্বন নষ্ট করছে ওজোন স্তরে।
পুজোর সময় বাজি ফাটাই, মাইক বাজাই জোরে,
তারই জন্য বধিরতা বাড়ছে ঘরে ঘরে।
চাষের ক্ষেতে প্রচুর বিষ ও সার দেবার তরে,
কীটপতঙ্গ, মৌমাছি ও ফড়িং যাচ্ছে মরে।
আয়রে মোরা সবাই মিলে এসব বন্ধ করি,
সুস্থ-সুন্দর-নির্মল পৃথিবী হাত মিলিয়ে গড়ি।

আয়রে মোরা শপথ নিই বিশ্ব পরিবেশ দিবসে,
পৃথিবীকে দেবনা যেতে দুষণের করাল গ্রাসে।
বন্ধ করি ব্যবহার করা বেশি বিষ ও সার,
পশুপাখিদেরও দিই বাঁচার অধিকার।
দু-হাত ভরে গাছ লাগাই, থামাই বৃক্ষছেদন,
রুখি সকল দূষণ ও প্লাস্টিক করি বর্জন।
সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা পৃথিবী গড়ি এখন,
থাকবে না যেথা কোন দূষণ, বিশ্ব-উষ্ণায়ন।

(জুন ২০১৯)


_________



জেগে ওঠ, ওরে পৃথিবী মায়ের বীর সন্তানদল!
চেয়ে দেখ, শত কলঙ্কে ছাইছে মাতার অঙ্গসকল!

একদা তাহার আকাশ হইতে ঝরিত করুণাধারা
হায় রে, আজিকে তাহা হইয়াছে বিষাক্ত অম্লে ভরা;
তাহার দানের জলধারা ছিল নির্মল, সুশীতল
আজিকে তাহারে বিষাইছে সভ্য দুনিয়ার যত গরল!

একদা যে বায়ু অঙ্গ চুমিয়া জুড়াইত তনু ও মন,
ইন্দ্রিয়সবে সুগন্ধিসুরভে করিত সে যে লেপন,
সে বায়ু প্রায় বিষবৎ, হায়, নাহি চলে তাহে শ্বাস!
ভাই ও বোনেরা, টানিবি না তোরা বিষাক্ত ধোঁয়ায় রাশ?

মরু পৃথিবীতে প্রাণ এনেছিল যে সবুজ ভাইয়েরা,
আজিও বাতাসে সদা প্রাণবায়ু জোগাইছে যাহারা,
তারা মানবের লালসার কোপে ভূতলে লুটিয়া যায়!
এই পৃথিবীতে জীবনদাতারা কেন এত অসহায়?

বসুধা দুহাত ভরিয়া উজাড় করিয়া দিয়াছে ধন,
যন্ত্রদানবে তাহার বুকের রক্ত করিছে মথন,
সেথা হতে তোরা সুধা লয়ে যাস, ছড়াইয়া পড়ে গরল!
আর কতদিন নীরবে এসব চাহিয়া দেখিবি? বল!

দেখিতে পাস না, এত অনাচার সহিতে নারে এ ধরা?
অনলে শ্যামল অরণ্য জ্বলিয়া হইতেছে সাহারা?
জ্বরে পুড়ে যায় দেহ তার, হায়, তাহার অশ্রুজলে
শহর নগর প্রান্তর যত তলাইবে অতলে!

হলাহল আজি জল স্থল ও অন্তরীক্ষে ছড়ায়,
বসুমাতা এত বিষের জ্বালা সহিতে না পারে, হায়!
বেদনায় কেঁপে ওঠে তনু তার, নিশ্বাসে ওঠে ঢেউ
তার রোষানলে পড়িলে যে মোরা বাঁচিব না আর কেউ!

আর কবে তোরা চক্ষু মিলিবি? শেষের সেদিন এলে?
আর কতদিন চলিতে থাকিবি প্রকৃতিরে অবহেলে?
এখনও সময় আছে, ওরে, তোরা ওঠ সবে আজ জেগে!
মোদের হাতেই যেন মরু- বুকে প্রাণের পরশ লাগে!

(জানুয়ারি ২০২২)


_________



পৃথিবীর বুকে জনম মোদের, মোরা তারই সন্তান,
আয় রে সকল ভাই-বোন, মোরা গাহিব সে মা'র গান।

মোরা সকলে মানুষ, মোদের সেই হোক পরিচয়,
ধর্ম- বর্ণ- জাতি সেথা কিছু না কভু হয়।
আয় রে হিন্দু, বৌদ্ধ- জৈন, খ্রিস্টান- মুসলমান,
আয় রে সকলে মিলিয়া গাহিব মানবের জয়গান।

ঘোর নরকের তমসা আজিকে ঘিরিয়াছে চারিদিক,
অসুরেরা সেথা ধ্বংসের খেলা খেলিছে দিকবিদিক।
সে নরকের আঁধারের বুকে শোন রে পাতিয়া কান!
দিগন্তরেখায় ওই শোনা যায় স্বর্গের আহ্বান।

নিজেদের প্রাণ ত্যজিয়া গড়িব স্বর্গ নরকময়,
শেষ নিঃশ্বাসে উড়াইয়া দিব নরকের যত ভয়।
সেথা মরণের বক্ষ চিরিয়া উছলি উঠিবে প্রাণ,
কণ্ঠে তাহার ধ্বনিয়া উঠিবে মানবের জয়গান।

বিঘ্ন- বিপদ- বাধা- বিপত্তি ডরাব না মোরা কিছু,
অসত্য এবং অন্যায়ের কাছে করিব না মাথা নিচু।
সকল কলুষ মুছে দেব মোরা, হইবে উদীয়মান
কলঙ্কমুক্ত পৃথিবী, মোদের রক্তে করিয়া স্নান।

সেথা আয় রে মানব, আয় রে সকল আতঙ্ক- মুক্ত প্রাণ!
আয় রে সকলে মিলিয়া গাহিব মানবের জয়গান।

(জুন ২০২১)

(ইংরেজি অনুবাদ Sing For Humanity . ইংরেজি অনুবাদের প্রথম প্রকাশ Bookosmia, এপ্রিল ২০২২)


_________



আয় রে আমার কাজ্লা মাণিক, আকাশ ব্যেপে ঝেঁপে আয়!
তপ্ত পাষাণ বুকের 'পরে পড় ঝরে তোর হৃদ্ - ধারায়!

সোনা - ভরা ঐ আঁচল পিছে কত কালশিরা মর্মে তোর,
যুগে যুগে ক্লেশ কশাঘাত হানি করেছে কোমল অঙ্গ ঘোর!

সুখ - সকালের নীল বসনা! মুখ বুজে সব যাস সয়ে,
বুকফাটা তোর রক্ত ধারা ঝরছে সোনা রোদ হয়ে!

উজল হাসির তপ্ত ফাঁসি পরবি কত গলায় আর?
ছিঁড়ে ফেল ফাঁপা সুখের মুখোশ, টুটুক শিকল হৃদ - কারার!

লজ্জাবতী লতা আমার! কাঁটার বর্ম জাগিয়ে তোল!
পড়ুক ফেটে তোর ব্যথা, হয়ে অত্যাচারীর কাঁদন - রোল!

আর সোনা নয়, হীরক - তীক্ষ্ণ বিদ্যুল্লতা তোল গলায়
নরম স্বরের ভীম হুংকারে কাঁপিয়ে দে আজ এ ধরায়!

অনেক হল বেদন - গরল নীলকণ্ঠের হাসি হায়,
লাজ ছেড়ে আজ হিয়ার বরিষ দগ্ধ চোখে ঝরাই আয়!

(আগস্ট ২০২৪)



© All rights reserved. 

Comments

Popular posts from this blog

Black Pit of Darkness | The Dark Truth

HELLO! WELCOME

Bengali works | অগ্নি - কন্যা