একদা সাজাতে চেয়েছিলে মোরে স্বর্গ- ফুলের মালায়,
চিনিনি তখন, ফিরিয়েছি মুখ অনাদরে অবহেলায়,
মেতেছি রঙিন নেশায়, ভুলেছি মিথ্যে প্রলোভনে!
তাই কি দিতেছ সরিয়ে আজিকে নিদারুণ অভিমানে?
নাহি অধিকার, জানি, তবু আজ সকল লজ্জা ছেড়ে
মন চায়, তব অঙ্গন মাঝে ধুলোয় লুটিয়ে পড়ে
তব অমৃত চরণের তলে দিই সঁপে এই প্রাণ!
হয়ে যাক ম্লান যত নিষ্ফল সফলতা, সম্মান!
নিজের বুকের রক্তে জ্বালিয়ে আশাহীন আশা- বাতি
বৃথাই চেয়েছি পার হতে কত বেদনা- নিবিড় রাতি,
দিব্যবিভার ঝর্ণায় যবে সিক্ত করেছ প্রাণ,
আঁধার ভুলেছি, পিয়েছি তোমার অমৃত- জ্যোতির দান!
ক্লান্ত নিশীথে একাকী আঁধারে নিষ্ফল ফল- ডালি
সাজিয়েছি নিজ বেদনার দানে, নীরবে অশ্রু ফেলি,
যে রাত্রে তব বাহুডোর মাঝে নিয়েছ আমারে টেনে
শত চন্দ্রের ঘুম টুটে ধরা ভেসেছে আলোর বানে।
আর সব রাত ফুরোলে, ফুটেছে উদয়- রক্তলেখায়
অনিশ্চিতের আগমন বাণী ধূসর মেঘের গায়,
যে প্রাতে নূতন অরুণের আলো ভরেছে কনক- কিরণে
নিজেরে পেয়েছি তব ছায়াতলে, তব স্বপ্নাঙ্গনে।
এনেছ ছিনিয়ে মৃত্যুর মুঠি হতে এ শাপিত প্রাণে,
আশিস- পরশে জাগিয়েছ ব্যথা-শলাকারে শক্তিবাণে,
আলোকদাত্রী মহিয়সী অয়ি! তবুও চিনিনি তোমা!
আজ কেন বৃথা অশ্রুর স্রোতে খুঁজি অক্ষম ক্ষমা?
অস্তপটের সূর্য যেদিন লুকিয়েছে মেঘ- মাঝে,
দিক- দিগন্ত সঘন আঁধারে ঢেকেছে অকাল সাঁঝে,
সেইদিন নিদ্ ভেঙেছে, দেখেছি, শত আলো- মণিহারে
জাগিছ আলোকবর্তিকা হয়ে জীবন সাগর- পারে!
এ স্বর্গ ছাড়ি কোথা যাব আমি, কোথা পাব এত আলো!
আর কোথা এত স্বর্ণের স্রোত ধুয়ে দেবে মোর কালো!
জানি, এ বিলাপ বিফল, তবু এ ব্যথার আগুন যেন
তব সুধাশিস মোর প্রাণে রাখে বজ্রের প্রভা- হেন।
যবে দূর নভে তারা হয়ে জাগি, যেন দেখি সেই দিন
উজ্জ্বল হয়ে ভাতিছ লক্ষ তমসারে করি ক্ষীণ
আদি অনন্ত স্বর্গপ্রভার শাশ্বত শিখা বহি
স্বপ্নলোকের আলোময়ী! মম অমৃত দেবী অয়ি!
© All rights reserved.
Comments
Post a Comment
Please let us know what do you think about it.