Skip to main content

স্বপ্ন, স্মৃতি ও যন্ত্রণা



Trigger Warning 

Don't proceed if you're too feeble-minded. Sometimes the language and imagery can be exceptionally strong and trigger emotional pain. 

_________


তুমি আসবে কবে?
নিঃসীম যন্ত্রণার কত শতসহস্র বর্ষ পরে? 

এসো,
উদ্ধার করো আমায় এই অন্ধকার উপত্যকা থেকে। 

তোমার শান্ত হাত মুছে দিক সব বেদনা,
আঁধার নামাক সেই দু-চোখে 
নির্মম যন্ত্রণা যাকে পুড়িয়ে শুষ্ক করে দিয়েছে ––

এসো, ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলো এই যন্ত্রণাদগ্ধ দেহমন, 
চিরতরে অবশ করো সমস্ত চেতনা 
হতাশার যুগপৎ আঘাত যাকে ক্ষতবিক্ষত করেছে নির্মমভাবে ––

বন্ধ করে দাও সেই বেদনার্ত নিঃশ্বাসপ্রবাহ 
যার কাছে ঘেঁষতে সাহস পায় না কোন আনন্দ,
যে হৃৎপিণ্ড এখনও স্পন্দিত করে এক মূল্যহীন জীবনকে 
তোমার বজ্রমুষ্টিতে স্তব্ধ করো তাকে, 
এক ক্লান্ত, ব্যর্থ জীবনের সমস্ত রক্ত ছড়িয়ে 
ঢেকে দাও নির্মম হতাশা ও যন্ত্রণার এক ইতিহাসকে। 

মৃত্যু, এসো, উদ্ধার করো আমাকে, 
নিয়ে যাও তোমার চিরশান্তির দেশে।

(জুন ২০২২)


_________




যখন সমস্ত পৃথিবী উঠেপড়ে লাগে তোমায় কষ্ট দেয়ার জন্য, 
যখন প্রতিটি ভালোবাসা ফিরে ফিরে সূঁচ ফোটায়,
যখন প্রতিকূল হয়ে ওঠে সারা মহাবিশ্ব, 

যখন সূর্যের সোনালি আলো পুড়িয়ে দেয়
তোমার অশ্রুহীন দুই চোখ, 
যখন দখিনা বাতাস উড়িয়ে নিয়ে যায় 
সমস্ত অবশিষ্ট আশা, আনন্দ, হাসি, 

যখন জীবনের প্রতিটি সৌন্দর্য
উপহাস করে তোমার অসহায়তাকে, 
আশপাশের প্রতিটি সাফল্য বিদ্রুপ করে হাসে 
তোমার ব্যর্থতা, তোমার ভগ্ন স্বপ্নের দিকে চেয়ে ––

যন্ত্রণার আগুন শুষে নেয় তোমার চোখের জল,
স্তব্ধ করে দেয় তোমার কণ্ঠস্বর,
আশপাশ থেকে সবকিছুর অস্তিত্ব মুছে দিতে চায়, 
ফেলে রাখতে চায় তোমাকে একরাশ হতাশার অন্ধকারে, 

বুকের ভেতর থেকে ফেটে পড়তে চায় একরাশ হাহাকার, 
শতধা বিদীর্ণ করতে চায় তোমার হৃদয়কে, 
চিরে ফালাফালা করে দেয় তোমাকে ভেতর থেকে 
রক্তস্রোতে ঢেকে দিতে চায় তোমার সমস্ত চেতনা ––

কিন্তু সে বেদনার আগুন জ্বলে অনন্তকাল, 
আশপাশ থেকে এগিয়ে আসা সান্ত্বনার মুষ্টিমেয় হাতগুলোও 
তাকে প্রশমিত করতে পারে না ––

তুমি জানো, একমাত্র যার স্পর্শ 
তোমার এই নিঃসীম যন্ত্রণাকে মুছে দিতে পারে,
একমাত্র যার হাত তোমায় এই অন্ধকূপ থেকে উদ্ধার করতে পারে 
সে মৃত্যু, সেই দেবদূত মৃত্যু ছাড়া আর কেউ নয় ––

তুমি অপেক্ষা করো তার শান্ত শীতল ছায়া 
কখন তোমাকে ঢেকে দেবে এক পরম শান্তিতে।

(জুন ২০২২)


_________



বিশ্বের সব আশাহত অসহায়দের শেষ আশ্রয় 
এক অনন্ত স্বপ্নের দেশ সেটা ––

কোন পার্থির যন্ত্রণা বা হাহাকারের সাহস নেই 
তার ধারে কাছে ঘেঁষবার,

সেখানে কোন হাসি কখনো মুছে যায় না, 
কোন স্বপ্ন কোনদিন ভঙ্গ হয় না,

সেখানে কোন অতীতের সুখস্মৃতি
তোমাকে যন্ত্রণা দিতে পারে না,
কোন বর্তমানের শূন্যতা
তোমাকে বিহ্বল করতে পারে না,
কোন ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা 
তোমাকে ভীত করতে পারে না,

পৃথিবী থেকে কোন বিশ্বাসঘাতকতা- বিস্মৃতির কালো হাত
সেখানে পৌঁছাতে সাহস করে না, 
কোন বিদ্রূপ বা উপহাসের বিষাক্ত হাসি 
তোমার শান্তি বিঘ্নিত করতে আসতে পারে না,

সেখানে তোমার সব সাফল্য-ব্যর্থতা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, 
ক্ষমতা- অক্ষমতা মূল্যহীন হয়ে যায়, 
শুধু মূল্য থাকে তোমার, তোমার আবেগ আর ভালোবাসার,

নিঃসীম যন্ত্রণা আর হতাশায় এক রক্তাক্ত সময় 
কাটিয়ে আসা তোমাকে আপন করে নিতে অপেক্ষায় থাকে 
তোমার রঙিন স্বপ্ন ও কল্পনারা ––

আমি যেতে চাই সেই অনন্ত শান্তির দেশে,
মৃত্যু যাকে আগলে রাখে তার শান্ত ছায়া দিয়ে।

(জুলাই ২০২২)


_________



জানি, তুমি আমাকে ফিরিয়ে দেবে না,
দুই বাহুর মাঝে আগলে রাখবে আমাকে 
পৃথিবীর সব দুঃখ-যন্ত্রণা থেকে

তাই আজ ইচ্ছা করে,
এখনই, এই মুহূর্তেই ছুটে যাই তোমার কাছে
লুটিয়ে পড়ি তোমার প্রাঙ্গণে বকুল গাছের তলায় 
তোমার শান্ত স্নেহকোমল ছায়ায় 
জুড়োব দুই দগ্ধ অশ্রুহীন চোখ
দু হাতে আঁকড়ে ধরব সেই মাটি
যেখানে একদিন পা ফেলে এগোতাম আমার স্বর্গে ––

হ্যাঁ, আমার শেষ শয্যা রচিত হোক আমার স্বর্গেই,
তোমার শিউলিতলায় বিস্তৃত সাদা চাদরের
তলায় লুকিয়ে সবার চোখের আড়ালে 
পাড়ি দেব চির স্বপ্নের দেশে।

(অক্টোবর ২০২২)


_________




ছিন্ন চর্মের নিচে মাংস বিস্ফোরিত করে
ফেটে পড়ে রক্তের প্রস্রবণের ধারা,
আর স্মৃতির পাতা থেকে তাকে মুছে দিতে চায়
চির অদর্শিত অপ্রকাশিত অশ্রুর শুষ্ক স্রোত—

অগ্নিবর্ষী আকাশের তলে যুগ-যুগান্তরের
অশ্রু-প্রস্রবণ বিলীন হয়ে মুক্তি পেতে চায়,
আর নিঃশেষিত কঠিন অঙ্গার হয়ে রক্তের পিণ্ড
জন্মজন্মান্তরের কালিমা‌র মাঝে মুখ ঢাকে লজ্জায়,
তবু যে রশ্মি চিরচিত্র আঁকে ইতিহাসের পাতায়,
তার তলে সে অশ্রুবাষ্পসিক্ত অঙ্গার চাপা পড়ে যায়,
বিশ্বনয়নের আড়ালে চির নিভৃত কাতর অন্ধকারে
নিজ কাহিনী রচে অব্যক্ত বেদনার ভাষায়—

তারপর নভোনৃপের বহ্নিজ্যোতিঃশলাকা ধেয়ে
সে অঙ্গারলিপি সযতনে ভস্মায়,
শুধু থাকে শূন্যতা, বিস্ফোরিত মাংসপিণ্ডের শূন্যতা,
আর তার তলে ছাইয়ের অভিশাপ ঘুরে ফেরে।

(জুন ২০২৩)



_________




প্রথম যে সকালে সদ্যফোটা এক কুঁড়ির 
বুক থেকে শিশির শুষে নিয়েছিল রৌদ্রের যন্ত্রণার তাপ,
সেই ব্যথা নিজমধ্যে আবদ্ধ করে
কেন নিশ্চুপ নিদ্রিত হয়ে ছিলে এতদিন!

আজ বহু সূর্য, বহু মেঘ, 
বহু আলো-আঁধারির প্রদক্ষিণ শেষে
সূর্যাস্তের লগ্নে কেন উন্মোচিত করলে নিজ অবগুণ্ঠন 
বিস্মৃত, অথবা সুপ্ত এক বেদনার কুয়াশা হয়ে!

প্রথমে হারানো স্বপ্ন হয়ে ফুটে ওঠে সে স্মৃতি,
তারপর, আরও গভীর হতে গভীরতর
যন্ত্রণার কৃপাণ হয়ে আঘাত হানে,
তার বুক থেকে সবটুকু রস শুষে নিয়ে —

নিঃস্ব, রিক্ত, নিঃশেষিত করে দেয় তাকে!
হায়, আজ অবহেলা কিংবা ঘৃণায় দেবরূপী বৃক্ষ তারে
ছুঁড়ে ফেলেও নিজ চরণে আশ্রয় দিতে চায় না।
অনিশ্চয়তার ঝড়ের স্রোতে শুষ্ক কুসুম বিলীন হয়ে যায়।

(জুলাই ২০২৩)


_________



তুমি শান্তি চাও?
নিজের একটা হাত ধরে দেখো —

নিজে যেদিন ওই মাংস থেঁতলে, ওই হাড় চূর্ণবিচূর্ণ করে
শিরা-ধমনি ছিঁড়ে ফেড়ে রক্তে ঢেকে দিতে পারবে সব —

তার আগে শান্তি পাবে না।

যেদিন নিজের হাতে নিজের দুই চোখ উপড়ে
নিষ্ঠুর নির্দয় ক্ষমাহীন এই পৃথিবীর 
সকল দৃশ্যপট মুছে দিতে পারবে নিজের কাছ থেকে

তার আগে শান্তি পাবে না।

যেদিন নিজের হাতে নিজের বক্ষস্থল চিরে
পাঁজর গুঁড়িয়ে
তীক্ষ্ণ লোহার ফলায় ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারবে 
নিজের হৃৎপিণ্ডকে

তার আগে শান্তি পাবে না।

তোমরা কোনদিনও আমাকে শান্তি দিতে পারবে না
কোনদিন না।

যেদিন বৃষ্টির জল ভূলুণ্ঠিত আমার শরীরের উপর থেকে
ধীরে, অতি ধীরে লোহিত লালিমা সরিয়ে
শুভ্র নগ্ন করে তুলে ধরবে আমার উন্মুক্ত মাংসের বীভৎসতা

সেদিন আমি শান্তি পাব।

এসো, বাতিল কাগজ কিংবা পুরনো কাপড়ের মতো
আমার চোখের সামনে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলো 
আমার শরীরটাকে

নিজের চোখে নিজের রক্তে ভেজা
ছিন্ন দলিত মথিত বিস্ফারিত নিজের মাংসের দলা
দেখতে দেখতে জন্মজন্মান্তরের শান্তি নামুক দু-চোখে

পৃথিবীর সবটুকু শান্তি বুভুক্ষের মত গোগ্রাসে গিলে নিয়ে
মূর্ত থেকে বিমূর্ত স্মৃতি হতে হতে বিলীন হয়ে যাব।

(জুলাই ২০২৩)



_________




সুদূরাগত কোন এক অজানা আলোর বার্তায়
শীর্ণ বিবর্ণ হয়ে গেল প্রশান্ত গম্ভীর অন্ধকার
বেদনার ধূসরতার মত মলিন আকাশের পটে 
রক্তলেখায় লেখা হল নতুন দিনের আগমন। 

শীতল বাতাস শিশিরের স্পর্শ বুলিয়ে দিয়েছিল যাদের চোখে, 
তারা ধীরে ধীরে জেগে উঠে প্রস্তুত হল 
নতুন সূর্যের আবেশ দেহে-মনে মেখে নিয়ে 
ফুলের মত ফুল হয়ে ফুটে উঠে, 

সৌন্দর্যে বর্ণে সৌরভে আকাশ বাতাস ধরাতলকে 
উজ্জ্বল সমৃদ্ধ সুসজ্জিত করে তোলার জন্য। 

এক কোণে একাকী এক ফুল —
শতবর্ষের সঞ্চিত বেদনাভারে নত,
ক্লান্ত বিধ্বস্ত মলিন তার দিক থেকে 
ঘৃণায় চোখ সরিয়ে নিল সুশোভিত পুষ্পরাজি, 

তার ব্যাকুল বিষণ্ণতা থেকে সযত্নে নিজেদের বাঁচিয়ে 
রূপে আভিজাত্যে প্রভায় পল্লবিত হয়ে উঠল তারা। 

এক অজানা সুতীব্র বিরাগ বা বিতৃষ্ণায় 
কোন সৌন্দর্য আর তার কাছে ঘেঁষে না —
তাকে দেখে রঙ হয়ে ওঠে বিবর্ণ, রূপ হারিয়ে ফেলে উজ্জ্বলতা,
হাসি পর্যবসিত হয় অশ্রুস্রোতে।

আকাশ-বাতাস জুড়ে আলোর নৃত্য,
জ্যোতি-শোভিত হয়ে ওঠে আনন্দ-উদ্যান,
হায়, সে বর্ণময়তা তার চোখে শুধুই এক সুদূর স্বপ্নের আবেশ
যা সুতীব্র ঘৃণায় তাকে ঠেলে রাখে নিভৃত নিরন্তর অন্ধকারে।

শুধু দেবসম এক বৃক্ষ
কৃপার উচ্ছিষ্টটুকু দিয়ে তাকে ধরে রেখেছে
শুষ্ক নীরস এক শাখার প্রান্তে, 

যেখানে জীবনের চোখে খেলা করে মৃত্যুর স্বপ্ন,
সূর্যের নূতন আলো ধরা দেয় শোণিত-আভা হয়ে,
স্নিগ্ধ বর্ষা আনে অশ্রুর লবণাক্ততা,
অন্ধকার — শুধু অন্ধকার হয়ে ওঠে পরম শান্তির আশ্রয়।

অচেনা অনাবিষ্কৃত যন্ত্রণার শলাকা যতদিন 
নিভৃতে নিঃশব্দে জর্জরিত করেছে তাকে,

ততদিন সে বুকের শেষ রক্তবিন্দুটুকু উজাড় করে
সমৃদ্ধ করতে চেয়েছে দেবসম বৃক্ষকে, 
আর বিষাদ-ব্যথার মঞ্জরীতে প্রস্ফুটিত হয়ে
স্থান পেতে চেয়েছে আনন্দ-উদ্যানে।

হায়, নিজেকেই শুধু আরও নিঃস্ব নিঃশেষিত করেছে সে, 
ক্রমশ তলিয়ে গিয়েছে বেদনার নিতল নিরালোকে।

পশ্চিম আকাশ যখন ছদ্ম-আঁধারে ঘনিয়ে আসে,
আর ঝঞ্ঝার আলোড়ন সগর্জনে ধায়,
পাষাণ থাবায় ছিঁড়ে উড়িয়ে নিতে চায় 
দেবসম বৃক্ষের সুপ্রাচীন সস্নেহ বৃন্ত-বন্ধন,

শেষ লগ্নের সেই আর্ত আকুলতার মাঝে
রিক্ত নিঃশেষিত পাপড়িগুলো দিয়ে সে সর্বশক্তিতে 
আঁকড়ে ধরতে চাইল আশ্রয়দাতা ত্রাতা বৃক্ষকে —

আর কণ্টকরূপে সদর্পে মাথা উঁচিয়ে থাকা 
নিয়তির দুর্বার ন্যায়দণ্ড
সতেজে সবেগে আমূল বিঁধে গেল তার বক্ষমাঝে।

মুহূর্তের জন্য বিশ্বচরাচরের চোখ 
অন্ধ করে দিল ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসা
নিঃশেষিত রক্ত-অঙ্গার ভস্মের ঝলক —

উদ্যানের সব ফুল, সব গাছ, সব প্রাণের 
হৃদয়ের অন্তঃ থেকে অন্তঃস্থল হতে
বিস্ফোরিত চিৎকারে কেঁদে উঠল সারা প্রকৃতি।

লজ্জায় মুখ ঢেকে সরে গেল সবটুকু আলো,
শেষ আকাশের গায়ে রক্তাক্ত অক্ষরে লিখে গেল হাহাকার। 

এতদিন যারা তাকে নির্বাসিত রেখেছিল ঘৃণায়
তাদের প্রথম আর্তনাদ ভয়ে ঘেঁষল না
শান্তির সুশীতল স্রোতে সুস্নাত তার কাছে।
 
সৃষ্টির অনাদি আদিমতার সৌম্য সুকোমল অন্ধকারে
নিজেকে আপন করে নিল সে,
চিরদিনের যত ঘৃণা বঞ্চনা ও অবহেলাকে
চিরন্তন ভালোবাসার ভাষায় ফিরিয়ে দিয়ে।

যে হাসি কেউ কোনদিন এঁকে দেয়নি তার মুখে, 
আজ তার ভেতরের শত যুগের সঞ্চিত যন্ত্রণায়
সহস্র রূপে প্রদীপ্ত হয়ে বিকশিত সে হাসি, 
উজ্জ্বলতম, সুন্দরতম এই আনন্দ-উদ্যানে। 

যে সৌন্দর্য তাকে উপহাস করেছে এতদিন 
যে সমৃদ্ধি তাকে দিয়েছে যন্ত্রণা,
আজ তাদের সবার ঊর্ধ্বে
তাদের সবার অতীত-ভবিষ্যতের সম্মিলনের চূড়ায়
সে হাসে —

তাদের সবার চেয়ে সমৃদ্ধতর সে আজ,
সবার চেয়ে মনোহর।

লক্ষ সূর্যের ছটাকে ম্লান করে দিয়ে 
শাশ্বত জ্যোতির্ময়তায় জাগে সে আজ, 
যন্ত্রণার রক্তশিখা তার স্পর্শে এসে 
ফুটে ওঠে স্নিগ্ধ স্নেহোজ্জ্বল বর্ণচ্ছটা হয়ে।

না, নিদ্রা নয়, চিরশান্তির নিদ্রা নয়, 
সকল বাস্তবের চেয়ে বাস্তবতর স্বপ্নে চির জাগরূক সে।

(সেপ্টেম্বর ২০২৩)


_________



কখনো- কখনো বিস্মৃতিও হয়ে ওঠে আশীর্বাদসম,
নিজের অস্তিত্বটুকুকেও মনে হয় যেন হঠাৎই ভীষণ ভারী —

সৃষ্টির আদিমতম সত্তার মাঝে নিঃশেষে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে চাই
মিলিয়ে যেতে চাই গলিত তরল প্রভা হয়ে।

শুধু এই প্রকৃতির আলো খেলা করুক আমার চোখে,
আমার নিশ্বাস মিশে যাক শুধু এই প্রকৃতির বাতাসে, 
আমার অস্তিত্ব থাকুক একমাত্র 
এই বিশ্বচরাচরের বুকেই — 

সকলের সুখী- আনন্দিত- গর্বিত মনন থেকে 
আমার শেষ চিহ্নটুকু মুছে দাও প্রভু, 
এত উজ্জ্বলতা থেকে আমাকে মুক্তি দাও চিরতরে — 
তোমার অণু-পরমাণুতে বিলীন হয়ে যেতে দাও, 
তোমার সুবিশাল সত্তায় 
একাকার করে দিতে দাও নিজেকে!

সেই ছোট্টবেলার লুকোচুরি খেলার মতো
লুকিয়ে যাব সবকিছুর কাছ থেকে,

মুছে যাব সমস্ত হিসেব, সমস্ত ভবিষ্যৎ-গণনার পাতার থেকে,
সরে যাব সমস্ত চাহিদা- আশা- প্রত্যাশা- গর্বের আলো থেকে, 
সমস্ত সফল উজ্জ্বল গর্বিত সম্মানিত চোখের আড়ালে
ঘুমিয়ে পড়বো আদি অনন্ত অকৃত্রিম শান্তির ছায়ায় —

যদি কখনো ব্যস্ত বর্তমান আর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের অবকাশে 
সুযোগ মেলে নিঃসঙ্গ অতীতের দিকে ফিরে তাকানোর,
তবে খুঁজতে চেষ্টা করো আমাকে — 

সকল আলো- অন্ধকার, সাফল্য- ব্যর্থতা, 
আশা- নিরাশা, হাসি- বেদনার সম্মিলনের শিখরে
জেগে থাকব কালহীন চির স্বপ্নে ।

(নভেম্বর ২০২৩)



© All rights reserved. 

Comments

Popular posts from this blog

Black Pit of Darkness | The Dark Truth

Everyone today thinks of it as a dream place. A place almost everybody knows as a place where all wishes come true. Still, I can't help but smile at them, smile at their blessed ignorance. Because I know the hellish truth about it. I know what a terrible, dangerous, dark place it is. And I again feel what a mercy it is not to know about some things— because not everything on this Earth is for everyone, and it is better to stay ignorant of some things. When I first completed the necessary processes, I couldn't help feeling something on my back, because I couldn't forget the vile things people spoke about the place. Still, suppressed excitement won over that natural alarm, and I felt too confident to keep myself safe from bad things.  The first few days went well. I used to go and spend quite some time there. I met several new people, who were all nice and friendly. I always tried to prove myself and quite succeeded in that— in no time at all I got a bunch of good friends who...

HELLO! WELCOME

Hello! Welcome to my website. Here you'll find all about me, my interests, works and achievements. Feel free to contact me. Thanks again for visiting my site! First, let me introduce myself. I'm Bidisha, a 18- year old girl from the leafy suburbs of Tamluk, West Bengal, India. I completed my 10th and 12th boards from Rajkumari Santanamoyee Girls' High School. Currently I'm pursuing B.Sc honours in physics from Midnapore College (Autonomous). I'm a passionate writer and enthusiastic about climate and sustainability. I've worked in an international youth- led environmentalist organisation named ClimateScience; and have written in Climate Spectrum, journal of another youth-led organisation named Clim-Sci. Diagnosed with severe depression, bipolar disorder and psychosis at 14, I spent a lot of my life suffering from mental health issues. Now I've left the darkest time behind, and write to raise awareness about mental health.  Nice to meet you! Explore more in my...

Stylus of the Green | A Message From June, 1989

Third place winner in ClimateScience Global Community Story Contest, September 2022 Waking up in my grass bed, I winced in pain. I looked at my body. I barely had any golden colour left on my skin. I know, I don’t have much time. Perhaps this very day I’ll drift to peace. So I’m relating the story of my life. Long ago, it wasn’t like this. We lived happily here, hopped around to catch insects, and danced in the rain. The mountain was a paradise for us then. But everything began to change. The weather began to get drier and drier. There was hardly any rain; if any, it brought only more heat. In that foul weather, a deadly fungus began to grow quickly, spreading an epidemic in our population. My parents, siblings, friends all perished to that fungal disease. But I’m not heartbroken. Because I know, I’ll be reunited with them very soon. Everybody in our colony is gone. Perhaps I’m the last survivor of the golden toad species. But I know what has brought this disaster. My best friend told ...