স্বপ্ন, স্মৃতি ও যন্ত্রণা ২

শুরুর কথা



আয় আরও একবার চোখাচোখি এসে 
হেসে বলি ‘কেমন আছিস?’ সেই ছোটবেলার মতো
আয় হাতে হাত রেখে আশ্বাস বিশ্বাসের
অবোধ শিশুর মতো, চিৎকার করে কাঁদি 
আমাদের যত অভিমান বিচ্ছেদ ছিল জমা
সময়ের অবিচারে, আয় দিই ধুয়ে অশ্রুজলে
স্বপ্নের সখী হয়ে ভুলে যাওয়া স্বর্গে
আয় আরও একবার হই বন্ধু — প্রতিযোগী নয়!

(To whoever it may concern)


—————



কুয়াশায় এলিয়ে থাকা ভোর ক্রমে মরে আসে, নিদ্রালু দুপুরে সোনালি চাঁদোয়া মেলে নির্জনতা, নতুন বসন্তের সকাল — ফুল ফোটে, পাখি গান গায়, তবু, অপেক্ষাও যেন কখন বিবর্ণ হয়ে আসে! আশা নিরুদ্দেশ, বিশ্বাস মৃত দীর্ঘকাল, তবু কোন স্বপ্নের সখা, সখী কিংবা দেবদূতের সোনার কাঠির পরশের তরে বসে থাকি ত্যক্ত দুয়ারে, তা তো জানি না! মেঘলা আকাশের বুক ফেটে শুধু নিঃসঙ্গতা ঝরে। নিজের দেহে নকশা আঁকি বসে লাল তুলিতে, লাল সরে, ক্রমে স্থান নেয় সাদা — সু- বীভৎস সাদা; আহা, কী অকৃত্রিম শান্তি, কী আতীব্র এ সুখ, নিভৃতে বেদনা মনে পড়ায় মনুষ্য- জনমকে! সুস্বাদের চুম্বন ঝরুক চোখে নিজ লোহিত সোমরসের, পূর্ণ করুক আমার পাত্র শাণিত ছুরির ফলায়।


●●●●●

হারিয়ে গেছো তুমি …. আদিম দুপুরের স্বর্ণময়ী হাসি যেমন ঝরে যায় গহীন তরুবরের নিবিড় আলিঙ্গনের ভিতরেও; কিংবা অস্তছায়ের ধূসর নীলিমায় যে সদ্যফোটা অসূর্যম্পশ্যা নিশা ছুঁয়েছিল আমাকে আতীব্র সুখে, কাজলা মেঘের ঘন আঁচলের নিচে সলাজ তাকেও ছিনিয়ে নিয়ে গেছে বসন্তের সুখ- উচ্ছল বর্ণময়তা … হারিয়ে গেছো তুমিও, চির গতিময় আলোকিত জীবনে! চাঁদ দিকচক্রবালে নিদ্রিত, তারারাও সরে গেছে ঘৃণায়; ... এখানে অগ্নিকুণ্ডের তাপে আমায় দগ্ধ করো নিরন্তর, কিন্তু বড় ভয় করি নিঃসঙ্গ নিতল তমসকে! মেঘে উন্মত্ত অস্তপটের কোলে সিক্ত হতে পারি নিরন্তর, কিন্তু বড় ভয় করি হর্ষ- উজ্জ্বল বসন্তপ্রাতে উত্তপ্ত ঘন লোহিত হয়ে আসা শিশির- কণারাশিকে!



●●●●●


ক্ষতমুখে লবণের তীক্ষ্ণ চুম্বন অথবা নিজের ত্বকের ওপর লোহিত লালিমার মাতাল ঘ্রাণ নয়, তুলি হাতে শিল্পীর হাসি তুমি; ক্যামেরার কারাগারে বন্দি রঙের ঐশ্বর্যে নিঃস্ব ঝরাফুল নয়, গৃহকোণে বাস্তবের শিকলে গর্বিত কিশোরীর কানে সুদূরাগত উৎসব- মূর্ছনা তুমি; তোমার ছায়ায় বেদনা হাসে না হাসির অন্তরালে; অসহায়তা পালাতে পথ পায় না তোমার আলোয়; অশ্রুর হরষিত পরাভব তোমার পরশে; অভিমানের স্নেহসিক্ত আত্মসমর্পণ তোমার আহ্বানে। তবু, আলো ডুবে যায় মহাপ্লাবনের মরুতে! যে অশ্রু বাষ্প হয়ে মুক্তি পেয়েছে, তাকে বৃথা খুঁজে রক্তাক্ত কোরো না নিজ সুসজ্জিত স্মৃতিপট! বসন্তের প্রথম ফুলের অতীত নিয়েই বাঁচতে পারব আমি।



●●●●●



একদিন আর জেগে উঠব না —

দেখব না আরেকটা রাতের মৃত্যু,
শুনব না বিবর্ণ ভোরের বিষণ্ণ বাতাসের হাহাকার,
ঐ নতুন দিনের আগুনের গোলাটাকে
তীক্ষ্ণ রোদের শলায় আমার চোখকে রক্তাক্ত করতে দেব না।

একদিন আর ফিরব না,
মিলিয়ে যাব শূন্যে — মহাশূন্যে,
বিলীন হয়ে যাব আদি অকৃত্রিম অন্ধকার — কিংবা আলোয়,
কখনো না ফেরার বিস্মরণে।

একদিন এই নির্মম ক্ষমাহীন বাস্তব
আর খুঁজে পাবে না আমার অস্তিত্বের বাস্তবতা;
একদিন সব অতীত আমাকে আপন করে নেবে,
যত চকচকে বর্তমান আর ঝকমকে ভবিষ্যৎ থেকে লুকিয়ে।

একদিন আমি তলিয়ে যাব ঘুমে,
জন্মজন্মান্তরের চির নিশঙ্ক, নিকম্প, নিষ্পাপ ঘুম;
কোন এক হারানো স্বপ্নে ডুবে থাকতে থাকতেই
হারিয়ে যাব চির স্বপ্নের অতলে।

একদিন আর জেগে উঠব না।


●●●●●


কী দেখিস তুই, কী খুঁজিস
ওই শ্মশানের দিকচক্রবালে চেয়ে?

পাবি না জল একফোঁটাও এই মরুতে,
এই নিঃস্পন্দ অন্ধকারে আলো পাবি না, পাবি না!

জল ভেবে নিজের বুকের রক্তই নিংড়ে যাবি চিরকাল,
আলোর স্বাদটুকু প্রাণে বোঝার আগেই
তার তাপেই ছাই — নিঃশেষে ছাই হয়ে যাবি!

সারা পৃথিবী যেখানে নির্লজ্জ,
সেখানে কার আব্রু ঢাকবি তুই, নিজের লজ্জা দিয়ে?

মৃত্যুই যেখানে একমাত্র ধ্রুবক, সেখানে
জীবনের মূল্য জীবনের কাছে থাকতে থাকতে সরে যা,

বিলীন হয়ে যা তুই, মিলিয়ে যা চিরতরে
মহাবিশ্বের চির আদি অনন্ত অকৃত্রিম বিস্মরণের অতলে
বিলুপ্ত ইতিহাস হয়ে যা!


© All rights reserved. 


 

Comments

Popular posts from this blog

Bengali works | বহ্নি - শিখা

HELLO! WELCOME

Bengali works | তব চরণের তলে