Bengali works | পুষ্পের প্রতিশোধ


 

সুদূরাগত কোন এক অজানা আলোর বার্তায়
শীর্ণ বিবর্ণ হয়ে গেল প্রশান্ত গম্ভীর অন্ধকার
বেদনার ধূসরতার মত মলিন আকাশের পটে 
রক্তলেখায় লেখা হল নতুন দিনের আগমন। 

শীতল বাতাস শিশিরের স্পর্শ বুলিয়ে দিয়েছিল যাদের চোখে, 
তারা ধীরে ধীরে জেগে উঠে প্রস্তুত হল 
নতুন সূর্যের আবেশ দেহে-মনে মেখে নিয়ে 
ফুলের মত ফুল হয়ে ফুটে উঠে, 

সৌন্দর্যে বর্ণে সৌরভে আকাশ বাতাস ধরাতলকে 
উজ্জ্বল সমৃদ্ধ সুসজ্জিত করে তোলার জন্য। 

এক কোণে একাকী এক ফুল —
শতবর্ষের সঞ্চিত বেদনাভারে নত,
ক্লান্ত বিধ্বস্ত মলিন তার দিক থেকে 
ঘৃণায় চোখ সরিয়ে নিল সুশোভিত পুষ্পরাজি, 

তার ব্যাকুল বিষণ্ণতা থেকে সযত্নে নিজেদের বাঁচিয়ে 
রূপে আভিজাত্যে প্রভায় পল্লবিত হয়ে উঠল তারা। 

এক অজানা সুতীব্র বিরাগ বা বিতৃষ্ণায় 
কোন সৌন্দর্য আর তার কাছে ঘেঁষে না —
তাকে দেখে রঙ হয়ে ওঠে বিবর্ণ, রূপ হারিয়ে ফেলে উজ্জ্বলতা,
হাসি পর্যবসিত হয় অশ্রুস্রোতে।

শুধু দেবসম এক বৃক্ষ
কৃপার উচ্ছিষ্টটুকু দিয়ে তাকে ধরে রেখেছে
শুষ্ক নীরস এক শাখার প্রান্তে, 

যেখানে জীবনের চোখে খেলা করে মৃত্যুর স্বপ্ন,
সূর্যের নূতন আলো ধরা দেয় শোণিত-আভা হয়ে,
স্নিগ্ধ বর্ষা আনে অশ্রুর লবণাক্ততা,
অন্ধকার — শুধু অন্ধকার হয়ে ওঠে পরম শান্তির আশ্রয়।

অচেনা অনাবিষ্কৃত যন্ত্রণার শলাকা যতদিন 
নিভৃতে নিঃশব্দে জর্জরিত করেছে তাকে,

ততদিন সে বুকের শেষ রক্তবিন্দুটুকু উজাড় করে
সমৃদ্ধ করতে চেয়েছে দেবসম বৃক্ষকে, 
আর বিষাদ-ব্যথার মঞ্জরীতে প্রস্ফুটিত হয়ে
স্থান পেতে চেয়েছে আনন্দ-উদ্যানে।

হায়, নিজেকেই শুধু আরও নিঃস্ব নিঃশেষিত করেছে সে, 
ক্রমশ তলিয়ে গিয়েছে বেদনার নিতল নিরালোকে।

পশ্চিম আকাশ যখন ছদ্ম-আঁধারে ঘনিয়ে আসে,
আর ঝঞ্ঝার আলোড়ন সগর্জনে ধায়,
পাষাণ থাবায় ছিঁড়ে উড়িয়ে নিতে চায় 
দেবসম বৃক্ষের সুপ্রাচীন সস্নেহ বৃন্ত-বন্ধন,

শেষ লগ্নের সেই আর্ত আকুলতার মাঝে
রিক্ত নিঃশেষিত পাপড়িগুলো দিয়ে সে সর্বশক্তিতে 
আঁকড়ে ধরতে চাইল আশ্রয়দাতা ত্রাতা বৃক্ষকে —

আর কণ্টকরূপে সদর্পে মাথা উঁচিয়ে থাকা 
নিয়তির দুর্বার ন্যায়দণ্ড
সতেজে সবেগে আমূল বিঁধে গেল তার বক্ষমাঝে।

মুহূর্তের জন্য বিশ্বচরাচরের চোখ 
অন্ধ করে দিল ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসা
নিঃশেষিত রক্ত-অঙ্গার ভস্মের ঝলক —

উদ্যানের সব ফুল, সব গাছ, সব প্রাণের 
হৃদয়ের অন্তঃ থেকে অন্তঃস্থল হতে
বিস্ফোরিত চিৎকারে কেঁদে উঠল সারা প্রকৃতি।

লজ্জায় মুখ ঢেকে সরে গেল সবটুকু আলো,
শেষ আকাশের গায়ে রক্তাক্ত অক্ষরে লিখে গেল হাহাকার। 

এতদিন যারা তাকে নির্বাসিত রেখেছিল ঘৃণায়
তাদের প্রথম আর্তনাদ ভয়ে ঘেঁষল না
শান্তির সুশীতল স্রোতে সুস্নাত তার কাছে।
 
সৃষ্টির অনাদি আদিমতার সৌম্য সুকোমল অন্ধকারে
নিজেকে আপন করে নিল সে,
চিরদিনের যত ঘৃণা বঞ্চনা ও অবহেলাকে
চিরন্তন ভালোবাসার ভাষায় ফিরিয়ে দিয়ে।

যে সৌন্দর্য তাকে উপহাস করেছে এতদিন 
যে সমৃদ্ধি তাকে দিয়েছে যন্ত্রণা,
আজ তাদের সবার ঊর্ধ্বে
তাদের সবার অতীত-ভবিষ্যতের সম্মিলনের চূড়ায়
সে হাসে —

তাদের সবার চেয়ে সমৃদ্ধতর সে আজ,
সবার চেয়ে মনোহর।

লক্ষ সূর্যের ছটাকে ম্লান করে দিয়ে 
শাশ্বত জ্যোতির্ময়তায় জাগে সে আজ, 
যন্ত্রণার রক্তশিখা তার স্পর্শে এসে 
ফুটে ওঠে স্নিগ্ধ স্নেহোজ্জ্বল বর্ণচ্ছটা হয়ে।

না, নিদ্রা নয়, চিরশান্তির নিদ্রা নয়, 
সকল বাস্তবের চেয়ে বাস্তবতর স্বপ্নে চির জাগরূক সে।



© All rights reserved. 

Comments

Popular posts from this blog

HELLO! WELCOME

Black Pit of Darkness | The Dark Truth

Stylus of the Green | A Message From June, 1989